শনিবার, ১২ জুন, ২০২১

মানব শরীরে এক বিশ্ময়কর অঙ্গ টেইলবোন (Tailbone) বা পুচ্ছাস্থি

 50|4|মৃত্তিকা তাদের কতটুকু গ্রাস করবে, তা আমার জানা আছে এবং আমার কাছে আছে সংরক্ষিত কিতাব।

মানুষ নিজেই স্রষ্টার অসাধারন একটা সৃষ্টি,কিন্তু মানুষের 'কক্কিক্স' হাড়টি তারো মধ্যে আরেকটু বেশিই চমকপ্রদ,যা কুরআন ও হাদীস দ্বারাই প্রমানিত!

মৃত্যুর পরে সমগ্র দেহ ক্ষয় হয়ে পচে গেলেও মূলত মানব দেহের একটি অংশ রয়ে যায়। যা কখনও মাটিতে মিশে যায় না এটি মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে অবস্থিত এজন্যই একে টেইলবোন (কক্সিস)বা পুচ্ছাস্থি বলে।

'কক্কিক্স' বা টেইলবোন থাকে মানুষের শিরদাড়ার একদম শেষে। পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুসারে অংশটির নাম   'আজবুয যানাব’ এটি সম্বন্ধে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বক্তব্য ছিল,(আবু হুরাইরা কর্তৃক বর্নিত)

"মানুষের এমন কোন অঙ্গ নেই যা নষ্ট হয়ে যাবে না,কিন্তু একটি বাদে,আর তা হল শেষপ্রান্তের ছোট্ট হাড় (little bone at the end of the coccyx) যেখান থেকে পুনরুত্থান দিবসে মানুষকে পুনর্জীবিত করা হবে।"

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন  

50 ক্বাফ |4|মৃত্তিকা তাদের কতটুকু গ্রাস করবে, তা আমার জানা আছে এবং আমার কাছে আছে সংরক্ষিত কিতাব।

আরেক হাদীসে এসেছে,

"সকল আদম সন্তানই শেষ হয়ে যাবে শুধু শেষপ্রান্তের হাড়টি ছাড়া,যেখান থেকে সে সৃষ্টি হয়েছিল,এবং সেখান থেকেই তাকে আবার পুনরুত্থিত করা হবে।"

কক্কিক্স নিয়ে পরবর্তীতে অনেক গবেষনাও হয়েছে এবং এই কথার বাস্তব প্রমানও মিলেছে।

ভ্রুণ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় প্রথমত এর দুইটা পার্ট থাকে,আউটার আর ইনার।সহজ ভাবে দেখলে,এই 'আউটার' অংশটার কাজ হচ্ছে ভ্রুণটাকে জরায়ু দেয়ালে আটকে রাখতে সাহায্য করা।

আর 'ভেতরের' অংশে ভ্রূনটা জরায়ু দেয়ালে আটকানোর ১৫ দিন পর তৈরি হয় 'প্রিমিটিভ স্ট্রিক' 'প্রিমিটিভ নোড' যা থেকে মানবদেহের অঙ্গগুলো তৈরির ধাপ শুরু হয়।

এই ধাপ হল তিনটা,এক্টোডার্ম,মেসোডার্ম আর এন্ডোডার্ম।এরা আসলে তিনটা ভ্রুণীয় স্তর,যা থেকেই ওই অঙ্গগুলো তৈরি হতে থাকবে।

যাক,কথা হচ্ছে,ওই 'প্রিমিটিভ নোড',যা এই স্তরগুলো সৃষ্টির মাধ্যমে ভ্রুণে জীবনের স্পন্দন ঘটায়,সে এই স্তরসৃষ্টির কাজ শেষ হতেই 'টেইলবোন' বা ওই কক্কিক্স সৃষ্টি করে ফেলে!এবং ওই হিসেবেই মানবদেহে রয়ে যায়।তাহলে দেখা যাচ্ছে,এই টেইলবোন সেই 'প্রিমিটিভ নোড' ধারন করে,যা নতুন জীবন সৃষ্টি করতে সক্ষম!

১৯৩৩ সালে মানবদেহ সৃষ্টির এই প্রাথমিক 'অর্গানাইজার' এর সন্ধান দিয়েছিলেন স্পেম্যান।১৯৩৫ সালে নোবেল পান তিনি।

 এর পর ২০০৩ সালে .ওথম্যান এবং শেখ আবু মাজিদ নামক দুজন বিজ্ঞানী একটা কক্কিক্স নিয়ে পুরো ১০ মিনিট ধরে আগুনে পোড়ান।দেখা যায় এটি পুড়ে প্রথমত লাল,পরে কালো বর্ন ধারন করে।

 একদল চায়নিজ বিজ্ঞানী তাদের ল্যাবে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমান করেছেন যা , মেরুদণ্ডের এই শেষ অংশটি টেইলবোন /আজবুয যানাব পুরোপুরি ধ্বংস হওয়া অসম্ভব। তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছে- যেমন শক্তিশালী এসিডে ডুবিয়ে দ্রবীভুত করে, আগুনে পোড়াতে , ভেঙ্গে ফেলতে এবং বিভিন্ন রেডিয়েশন দ্বারা প্রভাবিত করতে কিন্তু প্রত্যেকবার আজবুয যানাবের মূল গঠন বৈশিষ্ট্য অক্ষত থাকে।

অতঃপর ইউনিভার্সিটি অফ সানার(ইয়েমেন) হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক .সালেহ ওলাকির নিকট পুড়ে যাওয়া টুকরো গুলো পরীক্ষা করতে দেন।পরীক্ষায় দেখা যায়,কক্কিক্স পুড়ে গেলেও এর কোষগুলো পুরোপুরি অক্ষত,যা অন্য যেকোন হাড়,কিংবা অঙ্গ,কিংবা ত্বকের ক্ষেত্রেও পুরোপুরি অসম্ভব!

সুতরাং দেখা যাচ্ছে,রাসুল(সাঃ) এর কথা অনুযায়ীই,প্রকৃতপক্ষে জীবন সৃষ্টি এবং পরবর্তীতে পুনরুত্থান,দুটিই হচ্ছে কক্কিক্সের অন্তরালেই।

অতএব,তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(আর-রাহমান)

সংগৃহীত ও পরিমার্জিত

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন