মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৮

ধুমকেতু

ধুমকেতু হল সৌরজগতের এক ধরণের জ্যোতিষ্ক। এরা যখন সূর্যের কাছাকাছি দিয়ে যায় তখন সূর্যের তাপে উষ্ণ হয়ে যায় ফলে তাতে থাকা বস্তুগুলি গ্যাস বা ছোট ছোট খন্ড আকারে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।এই ব্যাপারটাকে আউটগ্যাসিং বলে। এতে ধুমকেতুতে একটি দৃশ্যমান বায়ুমন্ডলের সৃষ্টি হয় যাকে বলা হয় কোমা। আর এটা যদি ধুমকেতুর পেছনের দিকে লেজ আকারে ছড়িয়ে থাকে তবে বলে লেজ বা টেইল। এগুলো হবার কারণ ধুমকেতুতে মূল শরীর বা নিউক্লিয়াসে সূর্যের রেডিয়েশন ও সৌর বাতাসের আঘাত। এই নিউক্লিয়াস কয়েকশত মিটার থেকে দশ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাসের হতে পারে। ধুমকেতু সাধারণত পানির বরফ, ধুলা ও ছোট ছোট পাথর দিয়ে তৈরি হয়। ধুমকেতুর কোমা পৃথিবীর ব্যাসের ১৫ গুনেরও বেশী হতে পারে। লেজের দৈর্ঘ্য ৯৩ মিলিয়ন মাইলও হতে পারে। যদি যথেষ্ট উজ্জ্বল হয় তবে পৃথিবী থেকে খালি চোখেও দেখা যেতে পারে। বিভিন্ন সভ্যতা প্রাচীনকাল থেকেই ধুমকেতু পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
comet-45p-23dec2016-denny

ধুমকেতুর কক্ষপথ হয় খুবই উপবৃত্তাকার। ফলে তাদের সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ শেষ করতে দীর্ঘ দিন লেগে যায়। এই সময়কাল কয়েক বছর থেকে কয়েক মিলিয়ন বছরও হতে পারে। যেসব ধুমকেতু সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে মোটামুটি কম সময় নেয় তাদেরকে শর্ট পিরিয়ড ধুমকেতু বলে। এদের উৎপত্তি কাইপার বেল্ট। কাইপার বেল্টে অসংখ্য গ্রহাণু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে।এ গুলোই ধুমকেতু হিসেবে সৌরজগতের ভেতরের দিকে ঢুকে পড়ে। কাইপার বেল্ট নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে অবস্থিত। ধারণা করা হয় কাইপার বেল্টের উৎপত্তি অরট ক্লাউড থেকে। অরট ক্লাউড হল সূর্যের চারিদিকে গোলক আকৃতি নিয়ে অগনিত গ্রহানুর সমাবেশ। এর দূরত্ব সূর্য ও সবচেয়ে নিকটতম নক্ষত্রের দূরত্বের মাঝামাঝি। এখান থেকে যেসব ধুমকেতুর উৎপত্তি হয় তাদের বলে লং পিরিয়ড ধুমকেত। অরট ক্লাউডের এই সব গ্রহাণু যখন কোন কিছুর গ্র্যাভিটি যেমন পাশ দিয়ে অতিক্রম করা কোন নক্ষত্র দিয়ে প্রভাবিত হয় তখন এটি অরট ক্লাউড থেকে ভেতরের সৌরজগতের দিকে যাত্রা শুরু করে। আরেক ধরণের ধুমকেতুর নাম হাইপারবোলিক কমেট। এরাও অরট ক্লাউড থেকে উৎপন্ন হয়ে সূর্যকে পাশ কাটিয়ে সৌরজগতের বাইরে বেরিয়ে যায়।
oort-cloud
Oort cloud
গ্রহাণু ও ধুমকেতুর পার্থক্য হল ধুমকেতুতে তার নিউক্লিয়াসের চারিদিকে গ্র্যাভিটি দিয়ে প্রভাবিত না হওয়া একটি বায়ু মন্ডল তৈরি হয়। এই বায়ুমন্ডলের সামনের অংশ যেটা সামনের দিকে থাকে তার নাম কোমা, শেষ অংশ অনেক লম্বা লেজ। কিছু কিছু ধুমকেতু আছে যেগুলি এতবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে যে তাতে আর কোন উদ্বায়ী পদার্থ নেই যেগুলি সূর্যের তাপে ভেঙ্গে যাবে। এদের বলে বিলুপ্ত ধুমকেতু বা এক্সটিঙ্কট কমেট। এসব ধুমকেতুর কোন লেজ থাকেনা। ফলে এদের দেখতে গ্রহানুর মত লাগে। গ্রহানু অবশ্য ভিন্ন জায়াগায় থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এই জায়গার নাম এস্টরয়েড বেল্ট। এস্টরয়েড বেল্ট মঙ্গল ও বৃহস্পতির কক্ষপথের মাঝামাঝিতে অবস্থিত। 
২০১৪ সাল পর্যন্ত জানা ধুমকেতুর সংখ্যা ৫২৫৩টি। সংখ্যাটি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই সংখ্যাটি মোট ধুমকেতুর খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র। ধরা হয় আসল সংখ্যাটি প্রায় এক ট্রিলিয়ন। প্রতি বছর গড়ে একটি ধুমকেতু খালি চোখে দেখা যায়,  যদিও এর অনেকগুলিই খুবই আবছা ও আকর্ষণীয় নয়। যেসব ধুমকেতু দেখতে অনেকে উজ্জ্বল তাদের গ্রেট কমেটস বলা হয়। ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সী কিছুদিন আগে মনুষ্যহীন স্পেস প্রোব "রোজেটা" একটি ধুমকেতুতে অবতরণ করায়। এটাই প্রথম রোবট যেটা কোন ধুমকেতুতে অবতরণ করেছে। নাসা'র ডিপ ইম্প্যাক্ট মিশনে একটি ধুমকেতুর আভ্যন্তরীন গঠন গবেষণার জন্য এতে কৃত্তিম ক্রেটার তৈরি করা হয়। ধুমকেতুর নাম ছিল টেম্পেই ১।   

Related Posts:

  • নিজের সন্তান নিজেই গিলে খাচ্ছে বিশাল একটা তারা, উবে যাচ্ছে গ্রহ!যেন একটা কেটলিতে পানি ফুটছে আর সেই কেটলির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে গরম ধোঁয়া! আর সেই জল কেটলিতে ফুটতে ফুটতে পুরোটাই উবে যাচ্ছে! ধীরে ধীরে। কিছু ক্ষণ পর দেখা যাবে সেই কেটলিতে আর একটুও জল পড়ে নেই। পুরোটাই উবে গিয়েছে। ঠিক একই রক… Read More
  • সৌর বিদ্যুৎ স্কুল থেকে ফিরেই মালিহার উৎসুক কন্ঠে মাকে প্রশ্ন মা, সূর্য আমার কেমন মামা। মা বুঝতে না পেরে স্বাভাবিক প্রশ্ন কোন সূর্য? আরে সূর্য মামাকে চিনলেনা ঐ যে আকাশের সূর্য। মা এবার হেসে সূর্য কে মামা বলার নানা কারণ ব্যাখ্যা করতে থাকে… Read More
  • জ্যেতির মধ্যে জ্যোতি-Light Upon Light সূর্য যে তার নিজের আলো বিকিরণ করে তা ছোটবেলা থেকে আমরা জেনে এসেছি। আসলে সূর্যের এই আলো তার নিজস্ব আলো নয়। শুধু সূর্য় নয়, এই মহাবিশ্বে(Univers) যা কিছু আছে তার কারই নিজস্ব কোন মৌলিক শক্তি নেই। কেবল আছে শক্তি বিকিরণের, পরিবহন … Read More
  • মেঘ বৃষ্টির খেলা মেঘ কি? মেঘ বলতে পৃথিবীর বা অন্য কোন গ্রহের আবহাওয়া মন্ডলে ভাসমান জলকণার সমষ্টি বোঝানো হয়। সাধারণত পানি পৃথিবীতে কোথাও স্থির অবস্থায় থাকেনা, বিভিন্ন মাধ্যমে আবর্তিত হচ্ছে এবং অবস্থার পরিপর্তন হচ্ছে। আমরা সাধার… Read More
  • জেনারেটর আবিষ্কারের গল্প ১৭৯১ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর, ইংল্যান্ডে নিউইংটন বাটস অঞ্চলে কামার পরিবারে একটি শিশুর জন্ম হয়। শিশুটির নাম রাখা হয় ফ্যারাড। চার ভাইবোনের মধ্যে ফ্যারাড ছিলেন তৃতীয়। বাবা জেমস ছিলেন একজন কামার। আর্থিক অনটনের মধ্যেই ফ্যারাড বড়… Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন