প্রকৃতি বিজ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
প্রকৃতি বিজ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

দুই সমুদ্রের অন্তরালের রহস্য

তিনি পাশাপাশি দুই সাগর প্রবাহিত করেছেন। উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না।’ (সূরা ৫৫ আর-রাহমান, আয়াত: ১৯-২০)

আরবি ভাষায় বারযাখ (برزخ) শব্দের অর্থ বাঁধা বা অন্তরাল। এই অন্তরাল কোনো বস্তুগত বিষয় নয়। আরবিতে মারাজা (مرج) শব্দের অর্থ করলে বোঝায় দুটি বস্তুর পরস্পর মিলিত হয়ে মিশ্রিত হয়ে যাওয়া।

আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে, দুটি ভিন্ন সাগরের পানি যেখানে একত্রিত হয়, সেখানে তাদের মধ্যে একটি ব্যবধান থাকে। এই ব্যবধান উভয় সাগরের জলরাশিকে এমনভাবে বিভক্ত করে যে, তারা তাদের নিজস্ব তাপমাত্রা, মিষ্টতা বা লবণাক্ততা এবং ঘনত্ব বজায় রেখেই পাশাপাশি চলতে পারে।

মুলত  এটার কারণ হচ্ছে যেকোনো দুটি সমুদ্রের একত্রিত হওয়ার স্থানে তাদের পানি একে অপরের সাথে মিশে না তাদের ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে। তবে এই না মেশার ঘটনাটি স্থায়ী নয়। ভিন্ন ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার পানি এক সময় একে অপরের সাথে মিশে যায়।

আরো সহজ করে বললে আপনারা যারা সিলেটে সাত রংয়ের চা দেখেছেন। ঠিক এমটাই হয়ে থাকে এসব মোহনা বা দুই সমুদ্রের সংযোগ স্থলে।

সমুদ্র বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আয়াতটির যথার্থ ব্যাখ্যা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি প্রবাহমান দুটি ভিন্ন ভিন্ন সাগরের মধ্যে একটি অদৃশ্য ব্যবধানের অবস্থান রয়েছে, যার ফলে পাশাপাশি প্রবাহিত হওয়া সত্ত্বেও দুটি সাগরের পানি পরস্পরের সঙ্গে মিশে যায় না।

বিশিষ্ট সমুদ্র বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের কলারাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক . উইলিয়াম হে পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত এই তথ্যটির বৈজ্ঞানিক সততা প্রকাশ করেন।

এ ছাড়াও আধুনিককালে Marine Science I Oceanology তথা সমুদ্রবিজ্ঞান এর প্রমাণ পেয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্রে এর বাস্তব চিত্র দেখা গেছে। আটলান্টিক মহাসাগরকে ভূমধ্যসাগরের পানির সঙ্গে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। কিন্তু উভয়ের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। ভূমধ্যসাগরের পানি অধিক লবণাক্ত, বিস্বাদ ঘন। ভূমধ্যসাগরের পানি জিব্রাল্টার সেল বা সাগরের তলের উঁচু ভূমির ওপর দিয়ে আটলান্টিক সাগরের ভেতরে শতাধিক কিলোমিটার প্রবেশ করেছে এবং তা এক হাজার মিটার গভীরে পৌঁছার পরও তার উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যে সামান্য পরিবর্তন হয়নি। অথচ উভয়ের মাঝে রয়েছে প্রবল খরস্রোত উত্তাল তরঙ্গ। কিন্তু পানি মিশছে না। যেন উভয়ের মাঝে পর্দা পড়ে আছে। অন্তরায় বর্ণনা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে,

'বল কে দুই সমুদ্রের মাঝে অন্তরায় রেখেছেন? সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে কি কোনো উপাস্য আছে? মূলত তাদের অধিকাংশই জানে না।' (সূরা ২৭ নামল : ৬১)

এভাবে আলাস্কা উপসাগরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে দুই ধরনের পানির স্রোতরেখা। স্রোতরেখায় প্রবহমান পানি একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে না। প্রশান্ত মহাসাসাগরের শাখা হচ্ছে আলাস্কা উপসাগর। বিজ্ঞানীদের মতে পানি না মিশার কারণ হচ্ছে তাতে দুই মহাসাগরের সংযোগ ঘটেছে। উপসাগরটির মাঝ বরাবর পানির প্রবাহ আলাদা হয়ে বয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক . মনির খাশুকজি প্রসঙ্গে বলেন, আমি বাহরাইন উপসাগরের জলস্রোতে এরকম একটি স্থান দিয়ে অতিক্রম করেছিলাম। নৌকায় চলতে চলতে সেই বাঁধ (প্রাচীর) বরাবর গেলাম। খুব কাছে থেকে উভয় দিকের পানি মুখে দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলাম। পরীক্ষায় দেখা গেল, উভয় দিকের পানি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কী আশ্চর্য! একটার পানি লোনা, বিস্বাদ কিন্তু অপরটির পানি সুপেয়, মিষ্ট তৃষ্ণানিবারক। সমুদ্রের মাঝে এটা এক বিস্ময়কর কুদরত, যা মহান আল্লাহ তায়ালার অলৌকিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। আধুনিক কালের বিজ্ঞানীরা এতে বিস্ময়াবিষ্ট হয়েছেন। কোরআনের বিশুদ্ধতা অকপটে স্বীকার করেছেন। অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ফ্যান্সের প্রথিতযশা সমুদ্রবিজ্ঞানী জ্যাক ভি কোস্টা (Jack V Costa) সমুদ্রের তলদেশের বিভিন্ন আবিষ্কারে তার অবদান অনস্বীকার্য। দুই সমুদ্রের মিলনদৃশ্য নিয়ে তিনি ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তিনি তার রিসার্চে উপলব্ধি করেছিলেন যে, রোম সাগর আটলান্টিক মহাসাগর রাসায়নিক মিশ্রণের গুণাবলি মাত্রা দিক দিয়ে একটি আরেকটি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বাস্তবতা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার জন্য জিব্রাল্টারের দুই সমুদ্রের সংযোগস্থলে গবেষণা চালালেন। তিনি দেখলেন, জিব্রাল্টারের উত্তর তীর (মারুকেশ) আর দক্ষিণ তীর (স্পেন) থেকে আশ্চর্যজনকভাবে একটি মিষ্টি পানির ঝরনা উথলে ওঠে। ঝরনাটি উভয় সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ৪৫০ সূক্ষ্ম কোণে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয়ে চিরুনির দাঁতের আকার ধারণ করে বাঁধের মতো কাজ করে। ফলে রোম সাগর আটলান্টিক মহাসাগরের পানি একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে না।

পরে তাকে আল কোরআনে বর্ণিত আয়াতটি শোনানো হলো। তিনি দেখলেন, কোরআনে বর্ণিত তথ্যের সঙ্গে তার গবেষণার সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। জ্যাক ভি কস্টা চিন্তা করলেন, ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর মতো নিরক্ষর মানুষ সমুদ্রের তলদেশ পর্যবেক্ষণ করে এসব তথ্য কোরআনে লিখতে পারেন না। তাহলে কোরআনে সমুদ্র বিজ্ঞানের মহা তথ্য কীভাবে এলো? নিশ্চয় আল কোরআন ঐশী সত্য গ্রন্থ।

এটা কোনো মানব রচিত নয়। Jack V Costa মুসলমান হয়ে গেলেন। পবিত্র কোরআনের এমন অলৌকিকতা সর্বকালে প্রমাণিত হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিশ্চয় আল কোরআন মীমাংসাকারী বাণী এবং এটি নিরর্থক নয়।' (সূরা ৮৬ আত তারিক : ১৩-১৪)

অর্থাৎ পবিত্র কোরআনের প্রতিটি বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ এবং বাস্তবতার বিচারে সঠিক গুরুত্বপূর্ণ। দুই সমুদ্রের মিলন সম্পর্কিত বিষয়টি আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় সঠিকত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে 'মারাজাল বাহরাইন' শব্দ ব্যবহার করেছেন। 'মারাজা' শব্দের অর্থ হচ্ছে, স্বাধীনভাবে প্রবাহিত করা। ছেড়ে দেয়া। অর্থাৎ দুই সমুদ্রের পানি একই সঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু মাঝখানে আছে দুর্ভেদ্য প্রাচীর, যার ফলে তারা পরস্পর মিশ্রিত হতে পারছে না। প্রত্যক্ষদর্শী বিজ্ঞানীরা প্রাচীরের ব্যাপারটি স্পষ্ট লক্ষ করেছেন। পবিত্র কোরআনে 'বাঁধ বা অন্তরালের' কথা এসেছে।

তিনিই সমান্তরালে দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট, তৃষ্ণা নিবারক অন্যটি লোনা, বিস্বাদ। উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়, একটি দুর্ভেদ্য ব্যবধান।’ (সূরা ২৫ ফুরকান, আয়াত: ৫৩)

পবিত্র কুরআনের উক্ত তথ্যের বাস্তবতা কমবেশি সব মোহনাতেই লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের চাঁদপুররের রাজবাড়ী বহর' নামক স্থনে স্থানে দেখা যায়, পদ্মা মেঘনার পানি পাশাপাশি প্রবাহিত হচ্ছে, কিন্তু কেউ কারও সঙ্গে মিশে যাচ্ছে না। পদ্মার পানি ঘোলাটে আর মেঘনার পানি কুচকুচে কালো।

 এছাড়াও বরিশালের 'বলেশ্বর নদী' থেকে দুইটি ধারা প্রবাহিত হয়েছে। এক ধারার পানি লোনা বিস্বাদ এবং অন্য ধারার পানি মিষ্ট সুস্বাদু। বিষয়টি আমাদের সাধারণ মনে হলেও সমুদ্রবিজ্ঞানীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ আশ্চর্যজনক। পৃথিবীতে আল্লাহর কুদরতি নিদর্শনাবলির অন্ত নেই। পাহাড়-পর্বত, আকাশ-জমিন, নদ-নদী, চন্দ্র-সূর্য, তরুলতা পাখ-পাখালি সবই আল্লাহর কুদরতের সৃষ্টি। এগুলোর সৃষ্টি মানুষের কল্যাণার্থে। পাশাপাশি এতে উপদেশও নিহিত আছে। জ্ঞানীরা এসব দেখে আল্লাহর পরিচয় লাভ করে। ঈমান মজবুত করে।

শুধু নদী বা সমুদ্রই নয় ভুগর্ভেও বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন স্বাদের পানির প্রবাহ বিদ্যমান যা পবিত্র কুরআনের উক্ত বক্তব্যের সমার্থক বলে বিভিন্ন তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংগৃহীত ও পরিমার্জিত

মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০

তামার গাছ জিপসোফিয়া


গাছটার নাম জিপসোফিয়া, দেখতে অনেকটা সাদা গোলাপের মত, তবে গায়ে কোন কাটা নেই। অনেকটা জঙ্গলের মত। এই জঙ্গলের ফুল গুল শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এই গাছের একটা অদ্ভুত গুণও অাছে। এই গাছ যেখানে হয় তার নিচে তামার খনি পাওয়া যায়। এক গ্রাম মাটিতে যদি পাঁহাজার মাইক্রোগ্রাম তামা থাকে তবেই সেই মাটিতে এই সুন্দর ফুলের গাছ হয়। রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় এই গাছ দেখে তামার খনির সম্ভাবনা ধরে নেওয়া হয়।

শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০

সৌর বিদ্যুৎ সমাচার


স্কুল থেকে ফিরেই মালিহার উৎসুক কন্ঠে মাকে প্রশ্ন মা, সূর্য আমার কেমন মামা। মা বুঝতে না পেরে স্বাভাবিক প্রশ্ন কোন সূর্য? আরে সূর্য মামাকে চিনলেনা ঐ যে আকাশের সূর্য। মা এবার হেসে সূর্য কে মামা বলার নানা কারণ ব্যাখ্যা করতে থাকে। মালিহা সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে স্বভাবজাত নানা প্রশ্ন করে শেষমেশ মায়ের বকুনি খেয়েই তার পেটভরে। মালিহার হয়তো তার পাঠ্য বইয়ের কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা পড়েই এই প্রশ্নের উদগ্রীব হয়েছে। বন্ধুরা তোমরা কি জানো সূর্য্ কে কেন মামার মর্যাদা দেওয়া হয়? পছন্দের উপহার পাওয়া, নানা বায়না আর বিভিন্ন প্রয়োজন (যদিও আমাদের কাছে যা প্রয়োজনীয়, মা-বাবার চোখে তা বরারই অপ্রয়োজনীয় ছিল) মেটাতে মামাদের জুড়ি নেই। হয়তো মামার সাথে সূর্যের নানা চরিত্রগত মিলের কারণেই এই মামা-ভাগ্নে সম্পর্ক।


সূর্য, পৃথিবী হতে ৯২.৯৫,০০০,০০০ (বিরানব্বই দশমিক নয় পাঁচ মিলিয়ন) মাইল দূরে অবস্থিত। পৃথিবীর চেয়ে ১,৩০০,০০০ (তের লক্ষ) গুণ বৃহদাকৃতির ৩৫,০০০,০০০ (পয়ত্ৰিশ মিলিয়ন) সেলসিয়াস তাপমাত্ৰাধারী, শক্তির একটি অফুরন্ত ও নবায়নযোগ্য উৎস। সৌরকোষ আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার অন্যতম বিষয়, কিন্তু এর ইতিহাস বেশ পুরনো। সৌরশক্তির ব্যবহারের প্রচেষ্টার সেই আর্কিমিডিসের (২৮২-২০৭ খ্ৰীঃপূর্ব) সময় কালেও পাওয়া যায়।

১৮৩৯ সালে ফরাসী পদার্থবিজ্ঞানী বেকরেল সর্বপ্রথম আলোক-বিভব ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। একে ব্যবহার করে ১৮৮৩ সালে সোনার প্রলেপ দেওয়া অর্ধপরিবাহি সেলেনিয়াম থেকে প্রথম সৌরকোষ তৈরি করেন চার্লস ফ্রিটস। এর কর্মক্ষমতা (Efficiency) ছিল মাত্র ১%।

১৮৮৮ সালে রাশিয়ান পদার্থ বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার স্টলতভ প্রথম ফটোইলেকট্রিক কোষ তৈরি করেন। মূল ভিত্তি ছিল বহিঃস্থ ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট, যা ১৮৮৭ সালের প্রথম দিকে হেইনরিচ হার্জ আবিষ্কার করেছিলেন।

প্রথম সেমিকন্ডাকটর-জাংশন সৌরকোষ তৈরি হয় ১৯৪৬ সালে, যার উদ্ভাবক ছিলেন রাসেল ওল । তবে আধুনিক সৌরকোষ প্রযুক্তির জন্ম ১৯৫৬ সালে, আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরিতে। ড্যারিল চ্যাপলিন, কেল্ভিন ফুলার ও জেরাল্ড পিইয়ারসন উদ্ভাবিত এই কোষের কর্মক্ষমতা ছিল ৬% এর কাছাকাছি ।
১৯৫৮ সালে উৎক্ষেপিত ভ্যানগার্ড-১ উপগ্রহ যাতে সৌরকোষ প্রথম ব্যবহার করা হয়।


ফটোইলেকট্রিক ইফেক্টকে ব্যাখ্যা করেন ১৯০৫ সালে। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বিশ্ববাসীর কাছে আপেক্ষিক ত্বত্তের জন্য বেশি পরিচিত। মজার ব্যাপার হল অনেকের ধারণা তিনি নোবেল পুরস্কার পান আপেক্ষিক ত্বত্তের জন্য। আসলে তিনি ১৯২১ সালে নোবেল পুরস্কার পান ফটোইলেকট্রিক ইফেক্ট ব্যাখ্যার জন্য। রাসেল ওহল ১৯৪৬ সালে আধুনিক সংযোগ অর্ধপরিবাহী সৌরকোষের প্যাটেন্ট করেন ১৯৪৬ সালে। ১৯৭০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের জরেস আলফারভ ও তার সহকর্মীরা তৈরি করেন উচ্চ কার্যক্ষম হেটেরো-স্ট্রাকচার সৌরকোষ। ১৯৮৮ সালে আমেরিকার এপ্লাইড সোলার এনার্জি করপোরেশন (ASEC) তৈরি করে গ্যালিয়াম-আর্সেনাইডের কোষ যার কার্যক্ষমতা ছিল প্রায় ১৭%। পরবর্তী এক দশকে ASEC তাদের কোষের কার্যক্ষমতা উন্নীত করে ২০%-এ। এই কোষগুলো আমেরিকান মহাকাশযানগুলোতে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ২০০৭ সাল নাগাদ এই প্রযুক্তি ত্রি-জাংশন পর্যায়ে উন্নীত হয় ও প্রায় ৩০% কার্যক্ষমতা লাভ করে।

২০০০ দশকে সৌরকোষ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে এবং কোষের মৌলিক গঠনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়। তবে প্রকৃত অর্থে সোলার শক্তি নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা বৈজ্ঞানিক গুরুত্বলাভ করে সত্ত্বর এর দশকে।

সৌর বিদ্যুৎ মুলত ফটোভোল্টেইক বা (আলোক তড়িৎ) ক্রিয়ার মাধ্যেমে কাজ করে থাকে। মূলকথা আলোকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয় তড়িৎ।

ফটোভোল্টেইক শব্দটির ফটো এসেছে গ্রীক শব্দ ফস থেকে, যার অর্থ আলো। আর ভোল্টেইকের অর্থ বিদ্যুত যা নামকরণ করা হয়েছে ইতালিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালেসান্ড্রো ভোল্টা নাম থেকে। যার থেকে তড়িতচ্চালক শক্তির একক ভোল্টের নামকরণও।  

সূর্য সার্বজনীন হলেও বিশ্বের প্রতিটি স্থানই সূর্যকে সমানভাবে পায় না, ০° থেকে ৪৫° অক্ষাংশে অবস্থিত দেশগুলোই সৃর্যের বিকিরণ সর্বোচ্চ হারে পেয়ে থাকে। এদিক দিয়ে আমরা অনেক সৌভাগ্যবান।
আমাদের দেশে প্রতি দিন, এক বর্গ মিটারে যে সূর্যের আলো পতিত হয় তা প্রায় ৩.৫ থেকে ৫.২ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ শক্তির সমান।

সোলার প্যানেল সম্পর্কে জানার আগে চল সেমিকন্ডাক্টর আর জাংশন সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক। তোমরা হয়তো অনেকেই জানো, যে সকল পদার্থের বৈশিষ্ট্য পরিবাহী এবং অপরিবাহী পদার্থের মাঝামাঝি তাদেরকে সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী বলে। যেমনঃ সিলিকন (Si), জার্মেনিয়াম (Ge), কার্বন (C), টিন (Sn), গ্যালিয়াম আর্সেনাইড (GaAs), গ্যালিয়াম ফসফাইড (GaP), গ্যালিয়াম আর্সেনাইড ফসফাইড (GaAsP), লিড টেলুরাইড, ক্যাডমিয়াম সালফাইড (CdS)
পদার্থের পরমাণুর সর্বশেষ কক্ষপথে চারটি ইলেকট্রন থাকে। এর পরিবাহীতা 10-3 – 106 /Ohm/cm । এর ভ্যালেন্স ব্যান্ড (সর্বোচ্চ শক্তি স্তর)  ইলেকট্রন দিয়ে আংশিক পূর্ণ থাকে এবং কন্ডাকশন ব্যান্ড (সর্বোনিম্ন শক্তি স্তর) প্রায় খালি থাকে। ভ্যালেন্স ব্যান্ড এবং কন্ডাকশন ব্যান্ডের মধ্যে এনার্জি গ্যাপ অনেক কম। তাপমাত্রা এবং বৈদ্যুতিক চাপ বৃদ্ধি পেলে এর পরিবাহীতা বৃদ্ধি পায়। ঠিক এই বৈশিষ্ট্যকেই কাজে লাগিয়ে তৈরি হয় সৌর বিদ্যুৎ।

একটি পি-টাইপ সেমিকন্ডাকটরকে বিশেষ উপায়ে একটি এন-টাইপ সেমিকন্ডাকটরের সাথে  সংযোগ সৃষ্টি করলে সংযোগ তলটিকে পিএন জাংশন বলা হয়। 

স্বাভাবিক ভাবে পিএন জাংশন তৈরি করলেই পিএন জাংশনের প্রকৃত গুণাবলী পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বনে পিএন জাংশন তৈরি করা হয়। অধিকাংশ সেমিকন্ডাকটর ডিভাইসে এক বা একাধিক পিএন জাংশন থাকে। এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই জাংশন প্রকৃতির মাধ্যমে সেমিকন্ডাকটর ডিভাইসের বিভিন্ন বৈদ্যূতিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়।

অধিকাংশ প্যানেলই সিলিকনের তৈরি কোষের (সেল) সমাহার। এই কোষ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। বেশির ভাগ প্যানেলেই ৩০ থেকে ৩৬টি সিলিকন কোষ সিরিজ সংযোগ যুক্ত থাকে। এই সিলিকন কোষ গোলাকৃতির বা বর্গাকৃতির হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার ক্ষেত্রে আকৃতির কোন প্রভাব নেই। কিন্তু একই ক্ষেত্রফলে বর্গাকৃতির চেয়ে বেশি সংখ্যক গোলাকৃতির কোষ বসানো সম্ভব বলে গোলাকৃতির কোষ সম্বলিত প্যানেলে বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব।



এই কোষগুলোকে তাদের গাঢ় রং এবং আকৃতির জন্যে অতি সহজেই চিনতে পারা যায়। কোষগুলোর ভেতরে অনেক হালকা তার এদিক ওদিক বসানো থাকে। প্রতিটি গোলাকৃতি বা বর্গাকৃতির বস্তু এক একটি স্বতন্ত্র কোষ। এই কোষগুলো পাতলা চ্যাপ্টা ধাতুর পাত দিয়ে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।

সোলার কোষ কিভাবে কাজ করে
সূর্যের আলো যখন কোষ গুলোর উপর পতিত হয়, তখন ফোটন ইলিউমিনেশন ঘটে। অর্থাৎ সোলার সেলের ম্যাটেরিয়ালের ভ্যালেন্স ব্যান্ড থেকে একটা ইলেকট্রন কন্ডাকশন ব্যান্ডে চলে আসে। এর ফলে একটা অতিরিক্ত ইলেকট্রন-হোল জোড়া তৈরী হয়। পিএন জাংশনের মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহ ঘটে। এটাই আউটার সার্কিটে সোলার কারেন্ট হিসেবে প্রবাহিত হয়। কিন্তু এ ঘটনা ঘটাতে আপতিত ফোটন কনিকার শক্তি সোলার সেলের ব্যান্ড-গ্যাপ শক্তির চেয়ে বেশি হতে হয়। তা না হলে আলো পড়লেও লাভ হয় না। এ কারণেই দুপুর বেলা সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর থাকে তখন সবচেয়ে বেশি সৌর বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। উৎপাদিত বিদ্যুৎ কে পরিবাহী দ্বারা ব্যাটারির মাধ্যমে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা হয়।

সূর্যের আলোতে একটি সিলিকন কোষ, ০.৫ ভোল্ট উৎপন্ন করে। প্যানেলে সাধারণত ৩০ থেকে ৩৬টি কোষ থাকে। ৩০ কোষের প্যানেল থেকে ১৫ ভোল্ট এবং ৩৬ কোষের প্যানেল থেকে ১৮ ভোল্ট পাওয়া সম্ভব। 

বর্তমান সময়ের প্রস্তুতকারকরা যে সমস্ত কোষ তৈরি করে থাকেন সেটির প্রতিটি সাধারণত ২ থেকে ৩ এমপিয়ার বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে। প্রতিটি কোষ থেকে কি পরিমাণে বিদ্যুৎ প্রবাহ বা উৎপন্ন হবে তা নির্ভর করে কোষের মাপ এবং সূর্যের আলোর প্রাবল্যের উপর।

সৌরকোষের গঠনগত কাঠামোই যে বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দিবে ঠিক তা নয়। রৌদ্রের প্রভাব এখানে জ্বালানীর মত। মেঘমুক্ত আকাশের সবদিক থেকে প্যানেল বিকিরণ পায়। কিন্তু শৈতপ্রবাহ, বর্ষাকালে অথবা আকাশে মেঘ থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হয়। প্রতিকূল অবহাওয়াতে যে একে বারেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়না, এই কথা ঠিক নয়। সূর্য মেঘের আড়ালে থাকলেও প্যানেল অল্প পরিমাণে বিকিরণ পেতেই থাকে। মেঘ যুক্ত আকাশের বিকিরণকে বিক্ষিপ্ত বিকিরণ বলা হয়। আর মেঘমূক্ত আকাশ থেকে প্রাপ্ত বিকিরণকে প্ৰত্যক্ষ বিকিরণ বলা হয়। আর রাত্রে যেহেতু সূর্যের আলো থাকে না সেহেতু সোলার প্যানেল থেকে কোন বিদ্যুৎও উৎপন্ন হয় না। 

সাধারণত এই কোষগুলো সুরক্ষা করার জন্য একটি কাঁচ বা প্লাষ্টিকের উপর বসানো থাকে এবং এর উপরে একটি কাঁচের ঢাকনা দেয়া হয়। ঢাকনার এই কাঁচ বিশেষ ধরণের শক্ত কাঁচ যেটি ঝড়, শিলাবৃষ্টি বা কম্পনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সহজে ভাঙে না। কাঁচের উপরিভাগ এমনভাবে প্রস্তুত যাতে সূর্যের আলো অতি সহজেই কাঁচ ভেদ করে কোষে পড়তে পারে।

উপরিভাগের কাঁচ এবং কোষের তলদেশ- এ দুয়ের মধ্যবর্তী জায়গাগুলো বিশেষ ধরণের প্লাষ্টিক দিয়ে পূরণ করা থাকে। এ কারণে কোষগুলো জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে আসতে পারে না এবং সহজেই ক্ষয় হয় না। একটি সুন্দর স্থাপনযোগ্য ও পরিবহনযোগ্য অবস্থাতে আনার জন্যে পুরো জিনিসটাকে একটি অ্যালুমিনিয়াম বা প্লাষ্টিকের ফ্রেমে স্থাপন করা হয়।



দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে কোষের ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। কোষ সাধারণত কালো রং এর হয়ে থাকে এবং আলোর জন্যে সূর্যের মুখোমুখি হতে হয়, সে কারণে দ্রুত এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেজন্যে প্যানেলের চতুর্দিকে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন, বিশেষ করে প্যানেলের তলদেশ থেকে কমপক্ষে চার ইঞ্চি জায়গা বায়ুচলাচলের জন্যে ফাঁকা রাখা উচিত। অন্যথায় কোষ অতি উত্তপ্ত হয়ে ক্ষমতা হারাতে পারে। একটি প্যানেলকে সরাসরি কোনো টিনের চালে বা ছাদের উপর সেটে বসানো হলে কোষগুলো অতি উচ্চ তাপমাত্রা ধারণ করে এবং প্যানেসোয় সেলসিয়াস হতে প্রতি ১ ডিগ্ৰী বৃদ্ধির জন্য ক্ষমতা ০.৫° হারে হ্রাস পায়।

১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারী চার্জ করার জন্যে ৩৬ কোষের প্যানেলই যথেষ্ট, কিন্তু সতর্কতার সঙ্গে মনে রাখা উচিত যে, ব্যাটারী অতিরিক্ত চার্জে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যদি চার্জ নিয়ন্ত্রক ব্যবহার না করা হয়। অতএব চার্জ নিয়ন্ত্রক না থাকলে ৩০ কোষের প্যানেল ব্যবহার করাই উত্তম। আবার ৩০ কোষের প্যানেল ব্যবহার করলে ব্যাটারী সম্পূর্ণভাবে চার্জ নাও হতে পারে।

নানা বাস্তবতায় দিনদিন সৌর শক্তি জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রকৃতিক সম্পদের স্বল্পতা, পরিবেশ দূষণ, উৎপাদন খরচ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় সৌর শক্তি অনেক কার্যকর।
এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও ব্যবহৃত সোলার প্যানেলের দক্ষতা ৫০ শতাংশের বেশি নয়। আবার রাতের বেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ডার্ক এনার্জি কে কাজে লাগানোর গবেষণা চলছে। আর বর্তমানের আমাদের সোলার প্যনেল গুলোতে তাপ যুক্ত আলো ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম নয় । যে কোন আলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, দক্ষতা বৃদ্ধি আর ডার্ক এনার্জি কে কাজে লাগাতে পারলে সৌর বিদ্যুৎকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার সম্ভব। 
বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই, ভাল থেকো আবার দেখা হবে। 

লেখাটি ব্যাপন কিশোর বিজ্ঞান সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছিল।।

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

মেঘ বৃষ্টির খেলা



মেঘ কি?
মেঘ বলতে পৃথিবীর বা অন্য কোন গ্রহের আবহাওয়া মন্ডলে ভাসমান জলকণার সমষ্টি বোঝানো হয়। সাধারণত পানি পৃথিবীতে কোথাও স্থির অবস্থায় থাকেনা, বিভিন্ন মাধ্যমে আবর্তিত হচ্ছে এবং অবস্থার পরিপর্তন হচ্ছে। আমরা সাধারন ভাবে পানির কঠিন, তরল, বায়ুবীয় তিন অবস্থায় দেখে থাকি। বায়বীয় অবস্থারই একটি রূপ হল মেঘ। পানির সবচেয়ে বড় ও স্থায়ী উৎস হল সমুদ্র, এ ছাড়াও রয়েছে নদী নালা খাল বিল। সূর্যের তাপে বাষ্পীয়ভবনের মাধ্যমে এসব উৎস থেকে পানি হালকা হয়ে বাষ্পাকারে উপরে ওঠে এবং এই বাষ্প ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে তৈরি হয় ভাসমান মেঘ।


মেঘ থেকে বৃষ্টি
প্রথমে ভুপৃষ্ঠ থেকে জলীয়বাষ্প যতই উপরে উঠতে থাকে ততই ঠান্ডা ও ঘনীভূত হতে থাকে। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০০০ ফুট উঁচু থেকে ঘনীভূত হতে শুরু হয়। এই ঘনীভূত মেঘ অনেকটা ঘন কুয়াশার মত। এই কুয়াশামন্ডলী প্রচন্ড বাতাসের কারণে হিমায়িত অঞ্চলে পৌঁছালে আরো ঠান্ডা হয়ে পানির কণায় পরিণত হয়। নিচ থেকে উষ্ণ বাতাসের সাথে ধূলিকণা উপরে আসলে এই ধূলিকণাকে কেন্দ্র করে পানি জমতে থাকে। এক পর্যায়ে পানির কণা পাঁচ সেঃমিঃর বড় হলে তা মধ্যাকর্ষনের টানে বৃষ্টি হয়ে ভূমিতে পড়ে। এই বৃষ্টি ফোঁটার আকৃতি অনেক সময় ছোট-বড় হতে পারে। বৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বিশেষ ভুমিকা রাখে। উপরের শীতল বায়ু যেমন বাষ্পকে ঠান্ডা করে মেঘে পরিণত করে, তেমনি নিচের উষ্ণ বায়ু মেঘ থেকে বৃষ্টি নামতে ভূমিকা রাখে।

শিলা বৃষ্টি
অনেক সময় পানির কণা অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বরফকনায় পরিণত হয়। এই বরফকণা হিমায়িত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠের দিকে আসার সময় চারদিকের হিমায়িত ঘণীভূত কুয়াশার কারণে বরফ কণার আয়তন বেড়ে যায়। গড়ে একটি শিলার ব্যাস ৫ থেকে ১৫০ মিলিমিটার হতে পারে। সাধারণত পুঞ্জ বর্ষণ( ঈঁসঁষড়হরসনঁং পষড়ঁফং') মেঘ শিলাবৃষ্টির জন্য দায়ী।

ঝড়ো আর সংকটপূর্ণ আবহাওয়াতে যখন শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ উপরের দিকে উঠতে থাকে, তখন শিলা তৈরী হয়। উষ্ণ বায়ু উপরের দিকে উঠতে থাকে, আর শীতল বায়ু নিচের দিকে নামতে থাকে। যখন সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ হিমায়িত পানির উৎস তৈরি হয় তখন মেঘে বরফ জমতে থাকে ঐ শীতল পানির দানা এবং শীতল বায়ুর সংমিশ্রণে ।

ঊর্ধ্বমুখী বায়ু এমন একটা অবস্থানে পৌঁছায় যেখানে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে চলে যায় এবং পানি বরফ হতে শুরু করে। একপর্যায়ে ঊর্ধ্বমুখী বায়ুতে সৃষ্ট বরফ খন্ড ঐ বায়ুপ্রবাহ থেকে ছুটে গিয়ে নিচের দিকে পড়তে থাকে। এই ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর উপরে উঠে যাওয়ার পরে বরফকণা সৃষ্টি হয়ে নিম্নগামী হওয়ার প্রক্রিয়া বারবার চলতে থাকে। বরফকণার উপর আস্তরণ জমা হয়ে তা বরফ খন্ডের আকারে রূপ নেয়। এই ঊর্ধ্বমুখী বাতাসের কিন্তু বেশ ভালোই গতি থাকতে হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই গতি ৬০ মাইল/ঘন্টা ও হতে পারে।

যখন শিলা ঊর্ধ্বাকাশ থেকে পতিত হতে থাকে, তখন এটি পতনশীল অবস্থায় কিছুটা গলে যায়, আর এমন তাপমাত্রায় এটা গলে যার কারণে এটা আবার ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর সাথে উপরে উঠে যায়। সুতরাং, এর থেকেই বুঝা যায় যে খুব বড় আকারের শিলাখন্ড আসলে অনেকবারের পুনঃপ্রক্রিয়ার ফসল।

এই শিলা খন্ডগুলো বৃষ্টির পানির কণা বা মেঘকে আশ্রয় করে এবং যখন এগুলো ক্রমশঃ ভারী হয়ে উঠে এবং ঊর্ধ্বগামী বায়ু আর এতটা ভারীকণা বহন করতে পারে না, তখন শিলাখন্ড বৃষ্টির সাথে ভূমিতে পতিত হতে থাকে। যাকে আমরা শিলাবৃষ্টি হিসেবে দেখতে পাই।

মেঘেদের আচরণ ও বৈশিষ্টগত দিক দিয়ে দুটি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়: স্তরীভূত ও পরিচলনশীল। মূলত মেঘকে তার পাদদেশের উচ্চতা দিয়ে শ্রেণীবিভাগ করা হয়, চূড়ার উচ্চতা দিয়ে নয়। এই পদ্ধতি ১৮০২ সালে লিউক আস্কেসিয়ান সোসাইটিতে প্রস্তাব করেন।

মেঘের শ্রেনীবিভাগ আচরণগত দিক দিয়ে স্তরীভূত ও পরিচলনশীল দুই ভাগে ভাগ করা হলেও উচ্চতার দিক দিয়ে উঁচু, মধ্যম ও নিচু তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

এসব মেঘ সাধারনত ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ ফুট হয়ে থাকে। এই বিশাল উচ্চতার কারনে সূর্যের আলো মেঘ ভেদ করে পৃথিবীতে আসতে না পারার কারণে মেঘকে কালো দেখায়।

বিভিন্ন প্রকার মেঘ
১. অলক মেঘ (Cirrus clouds) : এ সকল মেঘ দেখতে বরফ স্ফটিকের পাখনার মত। মেঘের উপরে অনেক উচ্চতায় এরা গঠিত হয়। এদের কতক পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে দশ মাইলের মত উচ্চতায় গঠিত হয়ে থাকে।



২. আনুভূমিক মেঘ (Stratus clouds) : সাধারণত এ ধরণের মেঘ মাটি থেকে মাত্র কয়েক'শ ফুট উপরে গঠিত হয়। এরা হালকা-পাতলা কুয়াশার মত। ভোরবেলা কিংবা সন্ধ্যায় যখন বাতাস স্থির থাকে, তখন এ ধরনের মেঘ দেখা যায়।

৩.পুঞ্জ মেঘ (Cumulus clouds) : এগুলো দেখতে সুন্দর পুঞ্জিভূত মেঘ। এই ধরনের মেঘকে ছায়া মেঘ বলা হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে এরা আকাশে দেখা যায়।


পৃথিবী থেকে মাত্র এক মাইল উপরেও থাকে এবং মাটিতে দ্রুত ধাবমান ছায়া ফেলে। মধ্য বিকেলে সূর্য যখন সর্বাধিক উষ্ণ থাকে, তখন এরা আকার ও সংখ্যায় বেড়ে যায় এবং এদের শীর্ষদেশ কয়েক মাইল পর্যন্ত উচ্চতায় উঠে যায়। সন্ধ্যাবেলা এরা আনুভূমিক মেঘের স্তরে মিশে অদৃশ্য হয়ে যায়।

৪. জলধ মেঘ (Nimbus clouds) : এগুলো হচ্ছে ঘণ ধূসর বর্ণের বর্ষণ মেঘ। এদের গঠন-প্রকৃতি আকারবিহীন। বর্ষণ মেঘের নিচের দিকে অর্ধাংশ থাকে জলকণায় ভারী যা কখনও কখনও বৃষ্টির ফোঁটায় পরিণত হয়ে নিচে পতিত হয়। উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন ধরনের মেঘকে আবার সংযুক্ত আকারেও দেখা যায়।


৫. উচ্চপুঞ্জ মেঘ (Auto-cumulus clouds) গোলাকার, মহাতরঙ্গময়, সাদা কিংবা ধূসরাভ। এগুলো ছােট ছোট মেঘপুঞ্জের ঘন সন্নিবিষ্ট রূপ। আট থেকে বিশ হাজার ফুট উচ্চতায় এদের দেখা যায়।



৬ উচ্চ আনুভুমিক মেঘ (Alto-stratus clouds) দেখতে পুরু, ধুসর নীলাভ পাতের ন্যায় মাটি থেকে সাড়ে ছয় হাজার থেকে বিশ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থান করে ।





৭. ঘন অনুভূমিক মেঘ (Cirro-stratus) বিশ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বরফ স্ফটিকে গঠিত এক প্রকার পাতলা সাদা পাতের মত মেঘ।


৮. অলকাপুঞ্জ মেঘ (Cirro-cumulus) হচ্ছে ঘন মেঘমালার ভিতর গঠিত এক টুকরা মেঘ যা দেখতে সাগরতীরস্থ বালুকারাশির ঢেউয়ের মত। বিশ হাজার ফুট উচ্চতায় এই মেঘ গঠিত হয়।



৯.পুঞ্জ বর্ষণ মেঘ(Cumulonimbus clouds ) এই মেঘকে বজ্র মস্তক বলা হয়। এরা অনেকটা দেখতে ফুলকপির মত। এই ধরনের মেঘ বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে উপর পর্যন্ত দেখা যায়।



১০. আনুভূমিক পুঞ্জ (Strato-cumulus) মেঘ হচ্ছে সেই সব বিন্দু বিন্দু মেঘ যা পৃথিবী পৃষ্ঠের কাছাকাছি থেকে শুরু করে সাড়ে ছয় হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তার হয়ে থাকে।