সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭

ভিন গ্রহের সন্ধান মিলেছে

দুর্মূল্য, দুর্লভ রত্ন, মণি, মাণিক্য ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশে! রাশি রাশি মেঘ হয়ে!


ভেসে বেড়াচ্ছে চুনি, পান্না, নীলকান্ত মণি রশি রাশি, ঘন মেঘ হয়ে! উত্তরোত্তর জমে জমে সেই মেঘ ঘন, আরো ঘন হচ্ছে। আরো বড় জায়গায় জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে সেই মেঘ। ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশ জুড়ে। একটি ভিন গ্রহে।

এই প্রথম আমাদের সৌরমণ্ডল থেকে অনেক অনেক দূরে এমন একটি রত্ন, মণি, মাণিক্য, নীলকান্ত মণিতে ভরা ঘন, পুরু মেঘে ঢাকা একটি ভিন গ্রহের হদিশ পেলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। আমাদের সৌরমণ্ডল থেকে ১,০৪০ আলোকবর্ষ দূরে। কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের নজরে এই প্রথম ধরা পড়ল সেই ভিন গ্রহটি। যার নাম- ‘এইচএটি (হ্যাট)-পি-সেভেন বি’।

ব্রিটেনের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদেরই প্রথম নজরে পড়েছে এ বিস্ময়কর ভিন গ্রহটি। গত সোমবার তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-অ্যাস্ট্রোনমি’তে। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘ভেরিয়াবিলিটি ইন দ্য অ্যাটমস্ফিয়ার অফ দ্য হট জায়েন্ট প্ল্যানেট ‘এইচএটি (হ্যাট)-পি-সেভেন বি’।


মূল গবেষক ব্রিটেনের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ডেভিড জে আর্মস্ট্রং। তার সহযোগী গবেষকদের অন্যতম আমেরিকার আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, অনাবাসী ভারতীয় বিষ্ণু রেড্ডি।

কীভাবে হদিশ মিলল এই দুর্লভ, দুর্মূল্য রত্ন, মণি, মাণিক্যের ঘন মেঘে ঢাকা আমাদের সৌরমণ্ডলের অনেক অনেক দূরে থাকা এই ভিন গ্রহটির?

জানা গেছে, এই ভিন গ্রহটি সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পাঠিয়েছিল নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রচুর তথ্য ও ছবি পাঠিয়েছিল ওই ভিন গ্রহের আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘেরও। সেই সব তথ্যের ভিত্তিতেই ওই ভিন গ্রহটির বায়ুমণ্ডল, সম্ভাব্য আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা চালাতে গিয়ে রীতিমতো অবাক হতে হয়। কারণ বৃহস্পতি গ্রহটির চেয়েও চেহারায় ৪০ গুণ বড় আর পৃথিবীর চেয়ে কম করে ৫০০ গুণ ভারী ওই ভিন গ্রহটির আকাশে রাশি রাশি ঘন মেঘ ভেসে বেড়ায়। ভিন গ্রহটি তার ‘সূর্য’কে পাক মারে খুব কাছ থেকে। পৃথিবী সূর্যের যতটা কাছে রয়েছে, এই ভিন গ্রহটি তার অন্তত ৩০০ গুণ বেশি কাছে রয়েছে তার ‘সূর্যে’র।

এতটাই কাছে যে, সেই ‘সূর্য’কে পাক মারতে ভিন গ্রহটির সময় লাগে মাত্র ২.২ দিন (যেখানে আমাদের সূর্যকে পাক মারতে পৃথিবী সময় নেয় মোটামুটি ৩৬৫ দিন)। ফলে, সেই ‘সূর্যে’র (নক্ষত্র) গনগনে তাপে ওই ভিন গ্রহটির পিঠ একেবারে ঝলসে যাচ্ছে। আরো ভালভাবে বলতে হলে, ভিন গ্রহটি জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। আমাদের উপগ্রহ চাঁদের একটা পিঠ যেমন সব সময় থাকে পৃথিবীর দিকে (যেটাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, ‘টাইড্যালি লক্‌ড’), তার ‘সূর্যে’র দিকে তেমনই সব সময় ‘বুক পেতে রাখে’ ওই ভিন গ্রহটির একটি দিক (পিঠ বা সারফেস)। আর সেই ভিন গ্রহটি যাকে পাক মারছে, সেই ‘সূর্য’টি আমাদের সূর্যের চেহারার অন্তত দু’গুণ। অত বড় সূর্য, তার অত কাছে সেই গ্রহ আর সেই গ্রহের একটা পিঠ সব সময় প্রখর সূর্যের তাপ বুক পেতে নিচ্ছে। মানে, ভিন গ্রহটির ওই পিঠে সব সময় দিন। দিবালোক। তাই ধারণা করা হয়েছিল, ওই ভিন গ্রহের আকাশে কখনও মেঘ জমতে পারে না। ভিন গ্রহটির যে পিঠটি কোনও সময়ই সূর্যের আলো পায় না, তুলনায় অনেক অনেক ঠাণ্ডা হওয়ায়, একমাত্র সেই দিকেরই আকাশে মেঘের দেখা পাওয়া যাবে। আর ভিন গ্রহের যে-দিকটি সব সময় ‘বুক পেতে রেখেছে’ সূর্যের দিকে, সেখানকার আকাশে মেঘ জমার ফুরসৎই পাবে না। সূর্যের গনগনে তাপ তা ফুৎকারে উড়িয়ে দেবে।

কিন্তু বিস্ময়কর কী দেখতে পেয়েছিলেন গবেষকরা?
তাদের গবেষণাপত্রে মূল গবেষক ব্রিটেনের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ডেভিড জে আর্মস্ট্রং জানান, ‘‘আমরা দেখেছি, ভিন গ্রহটির দুই পিঠের আকাশেই মেঘ জমছে। আর সেখানকার বায়ুমণ্ডল অসম্ভব রকমের বিক্ষুব্ধ। আবহাওয়াও প্রচণ্ড পাগলাটে। কোনো ভিন গ্রহের গবেষণায় বায়ুমণ্ডলের এমন আচরণ এর আগে লক্ষ্য করা যায়নি। কোনো ভিন গ্রহের বায়ুমণ্ডলের এমন আচার-আচরণ সে অর্থে, ঐতিহাসিক। অত্যন্ত দুর্লভ, দুর্মূল্য রত্ন, মণি, মাণিক্যে ভরা মেঘ হলে তার যেমন আচার-আচরণ আশা করা যায়, ওই ভিন গ্রহের দুই পিঠের আকাশে আমরা যে মেঘের সম্ভাবনা দেখেছি, তারও আচরণ ঠিক তেমনটাই।’’

সূত্র : আনন্দবাজার

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন