সোমবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৮

হর গোবিন্দ খোরানা-Har Gobind Khorana

হর গোবিন্দ খোরানা (জন্ম: জানুয়ারী ৯, ১৯২২ – মৃত্যু: নভেম্বর ৯, ২০১১) ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী




খোরানার জন্ম ভারতের রায়পুরে একটি দরিদ্র পরিবারে । তিনি লাহরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করেন । ১৯৪৮ সালে তিনি লিভারপুল থেকে পি এইচ ডি (Ph.D. at Liverpool ) লাভ করেন এরপর ১৯৫১ তিনি কেমব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার আলেকজান্ডার টডের অধীনে (University of Cambridge (1951) under Sir Alexander Todd) ফেলোশিপ করার সময় নিউক্লিক আসিডের উপর গবেষণা শুরু করেন. পরে তিনি সুইজারল্যান্ডের সুইস ফেডেরাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি, কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (fellowships and professorships in Switzerland at the Swiss Federal Institute of Technology - ১৯৫২-৫৯) এর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন (United States at the University of Wisconsin -১৯৬০-৭০)  প্রতিষ্ঠানসমূহে ফেলোশিপ এবং অধ্যাপনা করেন ।. খোরানা ১৯৬৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন। পরে ১৯৭১ সালে তিনি ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি অনুষদে(faculty of the Massachusetts Institute of Technology) যোগ দেন,যেখানে তিনি ২০০৭ সালে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত  কর্মরত ছিলেন । নোবেল পুরস্কার ছাড়াও, খোরানার প্রাপ্তি  হিসেবে রয়েছে আলবার্ট লাস্কার বেসিক মেডিক্যাল রিসার্চ পুরস্কার (Albert Lasker Basic Medical Research Award -১৯৬৮) এবং জাতীয়  বিজ্ঞান পদক (National Medal of Science -১৯৮৭).

তিনি লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ সালে বিএসসি এবং ১৯৪৫ সালে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫২ সালে ভ্যাঙ্কুভারের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় যোগদান করেন। ১৯৬০ সালে ম্যাডিসনের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে যোগদান করেন এবং ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেখানে শিক্ষকতা করেন।

ভারতে জন্ম নেয়া আমেরিকান বায়োকেমিস্ট হর গোবিন্দ খোরানা(Har Gobind Khorana) ১৯৬৮ সালে নোবেল পুরস্কার (Nobel Prize in Physiology or Medicine) প্রাপ্ত হন। তিনি সর্বপ্রথম কোষের কার্যসম্পাদনকারী প্রোটিন কিভাবে জেনেটিক সংকেত (genetic code) থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকে তা প্রদর্শন করেন। তার সাথের নোবেল বিজয়ীরা হলেন কে মার্শাল ডব্লিউ নিরেনবার্গ (Marshall W. Nirenberg ) এবং রবার্ট ডব্লিউ হোলে (Robert W. Holley )। উনারা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ভাবে গবেষণা করে উৎঘাটন করেন যে কিভাবে নিউক্লিক আসিডের(nucleic acids) মধ্যে থাকা নিউক্লিওটাইড (nucleotides, যা কীনা কোষের জেনেটিক কোড বহন করে), কোষের প্রোটিন সংশ্লেষণ (synthesis of proteins) নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

তাদের গবেষণা ছিল RNA তে প্রাপ্ত নিউক্লিক এসিডসমূহ । কোষের জন্য যে অত্যাবশ্যকীয় তিনটি উপাদান তা হচ্ছে RNA, DNA এবং প্রোটিন । RNA এর চারটি বেস বা ক্ষারক, adenine, cytosine, uracil এবং guanine, যা A, C, U এবং G,দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এই তিনজন বিজ্ঞানী দেখিয়েছেন যে এই রাসায়নিক বেস তিন অক্ষরের "শব্দ" (“words”) গঠন করে  যা সংশ্লিষ্ট অ্যামিনো এসিডের প্রতিনিধিত্ব করে । মূলত এই সঙ্কেত এবং এমাইনো এসিডের মধ্যকার যোগসূত্র স্থাপন করাটা ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। নিরেনবার্গ এদের প্রথমটি আবিষ্কার করলেন যা ছিল ফিনাইলএলানিন (phenylalanine )। কিন্তু খোরানা এতে সন্তুষ্ট থাকলেন না, তিনি সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক খুঁজতে লাগলেন এবং বের করতে সমর্থ হলেন। তিনি পরে ওগুলোর  সেরিন (serine ) এবং লেউসিন (leucine) হিসেবে নামকরন করলেন। তার এই অসামান্য পর্যবেক্ষনের মধ্য দিয়েই তিনিই প্রথম  সুস্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করলেন যে সব জেনেটিক বার্তাই তিনটি অক্ষর দ্বারা গঠিত এবং এরূপ মোট ৬৪ টি বিন্যাস পাওয়া সম্ভব ।এরই মধ্য দিয়ে তিনি বিজ্ঞানীদের জন্য তিনি তৈরি করে ফেললেন একটি জেনেটিক কোড বা সংকেতের একটি পুর্নাঙ্গ “অভিধান” (“dictionary” ) যাতে প্রতিটি এমাইনো এসিডকে সুনির্দিষ্ট  ভাবে সংজ্ঞায়িত করা আছে। তিনি নিরেনবার্গ কে সাথে নিয়ে এও আবিষ্কার করলেন যে প্রাপ্ত এই শব্দ  গুলোই নির্ধারন করে সঙ্কেতের কোথা থেকে শুরু করতে হবে এবং কথাই বা তা পড়া শেষ  হবে।


১৯৭২ সালে তিনি আরেক বিস্ময় দেখালেন। হাতের কাছের পাওয়া যায় এমন সহযলভ্য (off-the-shelf chemicals)  রাসায়নিক বস্তু দিয়ে কৃত্রিম জিন তৈরি করে ফেললেন। এর ৪ বছর পর তিনি ঘোষনা দিলেন যে ব্যাকটেরিয়ার কোষে  কৃত্রিম জিনের কার্যকারিতা পাওয়া গেছে, যা বর্তমান জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে।

তার পরবর্তি পর্যায়ের গবেষণা ছিল মেরুদন্ডী প্রাণীর দৃষ্টি নিয়ে। তিনি আণবিক পর্যায়ে গবেষণা করেন মূলত চোখের রডোপসিন (Rhodopsin) কোষের গঠন ও কাজ নিয়ে মধ্যে । তিনি গবেষণা করে বের করেন যে রেটিনার প্রদাহ , রাতকানা এসব রডোপসিনের জেনেটিক বিকারের ফল যাকে বলা হয় মিউটেশন (mutation)।

৯ নভেম্বর ২০১১ তিনি ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন